নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের প্রাক্তন পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সিআইডি একশ কোটি টাকার অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণাদি পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মামলা নং–১১, তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ধারা ৪(২)(৪) অনুযায়ী করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম আগে সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তদন্তে দেখা গেছে, এই দায়িত্বের সুযোগে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হন।
২০১০ সালে জাহাঙ্গীর আলম ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা শুরু করেন। তবে এর আড়ালে অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং লেনদেন পরিচালনা করা হয়। কোম্পানির একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি অর্থ লেনদেন হয়েছে। এসব অর্থের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি এবং ব্যবসার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব লেনদেন হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।
অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন চালিয়েছেন। ২০২৪ সালের জুনে জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের সরকারি অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও তারা বিদেশে অবস্থান করছেন।
প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী ও ভাই এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
সিআইডি এখনো তদন্ত ও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত করা এবং তাদের গ্রেফতার করা যায়।