November 23, 2025, 11:15 pm

লাদাখে উত্তেজনা চরমে: বিক্ষোভ সহিংসতায় নিহত অন্তত ৪

  • Update Time : Friday, September 26, 2025
  • 25 Time View

ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে রাজ্যের মর্যাদা ও সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। বুধবার রাজধানী লেহ-তে সংঘটিত এ ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক পুলিশ সদস্যও।

ঘটনার পরপরই লেহ জেলার প্রশাসন পুরো শহরে কারফিউ জারি করেছে এবং পাঁচজনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিক্ষোভ চলাকালে উত্তেজিত আন্দোলনকারীরা স্থানীয় বিজেপি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেন, ভাঙচুর চালানো হয় একাধিক গাড়িতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। এরপরেই শহরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

লেহ’র জেলাশাসক রোমিল সিং ডঙ্ক স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় জানানো হয়, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএনএস), ২০২৩-এর ১৬৩ ধারার আওতায় শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া কোনো সভা-সমাবেশ, মিছিল কিংবা পদযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এই বিক্ষোভের আয়োজক ছিল ‘লেহ অ্যাপেক্স বডি’-এর যুব শাখা। তাদের দাবি, লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় এনে উপজাতি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

অ্যাপেক্স বডির সভাপতি থুপস্তান সোয়াং বলেন, “আমরা লাদাখের অধিকার রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু আজকের ঘটনায় আমরা আমাদের কয়েকজন তরুণকে হারিয়েছি। তাদের ত্যাগ বৃথা যেতে দেব না।”

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয় ভারত সরকার। একইসঙ্গে লাদাখকে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে পৃথক করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়।

তৎকালীন সিদ্ধান্তে অনেকে স্বাগত জানালেও, পরবর্তীতে উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের অভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে লাদাখের জনগণ। রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে শুরু হয় বিভিন্ন আন্দোলন।

জলবায়ুকর্মী ও লাদাখের জনপ্রিয় সামাজিক নেতা সোনম ওয়াংচুকের নেতৃত্বে চলমান শান্তিপূর্ণ অনশনেই উত্তেজনার সূচনা। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি এবং আরও ৩৫ জন অনশন শুরু করেন। অনশনরত দু’জনকে হাসপাতালে নিতে হলে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়, যা সহিংসতায় রূপ নেয়।

বিক্ষোভের সহিংস রূপ নেওয়ার পর সোনম ওয়াংচুক অনশন প্রত্যাহার করে এক বিবৃতিতে বলেন, “শান্তিপূর্ণ বার্তা ব্যর্থ হয়েছে। আমি যুবকদের বলবো, সহিংসতা বন্ধ করুন। এতে আমাদের প্রকৃত লক্ষ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

তিনি আরও বলেন, “গত পাঁচ বছর ধরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু তরুণদের হতাশা ও বেকারত্বের চাপ এখন বিস্ফোরণের রূপ নিচ্ছে। আমি তাদের পদ্ধতির বিরোধিতা করছি।”

এদিকে সহিংসতার জন্য সোনম ওয়াংচুককেই দায়ী করেছে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “সোনম ওয়াংচুক আরব বসন্ত এবং নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের উদাহরণ টেনে আন্দোলনকারীদের উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়েই অনেকে বিক্ষোভ থেকে সরে গিয়ে রাজনৈতিক দলের অফিস ও সরকারি দপ্তরে হামলা চালিয়েছে।”

লাদাখের এই অস্থিরতা শুধু একটি অঞ্চলের রাজনৈতিক দাবির বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ব্যর্থতার ফলাফল বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই সংকটের কী ধরনের রাজনৈতিক সমাধান খোঁজে, নাকি আরো কঠোর অবস্থান নেয়।

Spread the love
More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved
Theme Developed BY ThemesBazar.Com