২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল অভিযানের পর গাজায় ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দিত এই আগ্রাসনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফিলিস্তিনিরা, তবে ইসরায়েলি সেনাদের মাঝেও এর ভয়াবহ মানসিক প্রভাব পড়েছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন দপ্তর জানিয়েছে, গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ২০ হাজারেরও বেশি আহত সেনাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের অর্ধেকের বেশি শারীরিক ক্ষতের পাশাপাশি নানা ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
দ্য টাইমস অফ ইসরায়েল-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে যেসব সেনা রিহ্যাব সেন্টারে চিকিৎসাধীন, তাদের মধ্যে অন্তত ৫৬ শতাংশ পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD) ও অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত।
পুনর্বাসন দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী: ২০ হাজার আহত সেনার ৪৫% শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত, ৩৫% মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত, ২০% একইসঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, ৬৪% আহত সেনাই রিজার্ভ ইউনিটের সদস্য, গড়ে প্রতি মাসে ১ হাজার নতুন আহত সেনাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেইসঙ্গে পুরোনো যুদ্ধের আহতদের থেকেও নিয়মিত সহায়তার আবেদন আসছে।
গাজা ও আগের যুদ্ধ মিলিয়ে বর্তমানে ৮১,৭০০ সেনাকে চিকিৎসা দিচ্ছে পুনর্বাসন বিভাগ। এর মধ্যে ৩৮% মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে চিকিৎসাধীন সেনার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর অন্তত অর্ধেক PTSD বা অন্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হবেন।
বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে ইসরায়েল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন বাজেট প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও, এর অর্ধেকই মানসিক চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে। তবুও, প্রশিক্ষিত থেরাপিস্টের অভাব, কর্মী সংকট এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে প্রতি ৭৫০ জন রোগীর জন্য রয়েছে মাত্র একজন থেরাপিস্ট বা পুনর্বাসন কর্মী, যা কার্যকর চিকিৎসায় বড় বাধা।
এই সংকট নিরসনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মটরিচ একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন লেমিত হেলথ সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান ড. শ্লোমো মোর-ইয়োসেফ। এই কমিটি আহত সেনাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থার মানোন্নয়নে সুপারিশ দেবে।
টাইমস অফ ইসরায়েলের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত: ৯০৪ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত।
৭ অক্টোবরেই নিহত ৩২৯ জন
গাজায় স্থল অভিযানে ৪৬০ জন
হিজবুল্লাহর হামলায় ২৯ জন
লেবাননে ৫১ জন
পশ্চিম তীরে ২২ জন
ইরাক ও ইরানের হামলায় ৩ জন
সহকর্মীর গুলিতে নিহত ১ জন
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মানসিক রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকলে আত্মহত্যার হারও বাড়তে পারে। সেনাবাহিনীতে দীর্ঘমেয়াদি সংকট দেখা দিতে পারে দক্ষতা, মনোবল ও পুনরায় যুদ্ধ-সক্ষমতা নিয়ে।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে অবিলম্বে জাতীয় পরিকল্পনা ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।