প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলের গণহত্যামূলক অভিযানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। একদিকে টানা বিমান ও স্থল হামলা, অন্যদিকে খাদ্য ও চিকিৎসার মারাত্মক সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে অঞ্চলটি। এসবের ফলে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।
গাজায় প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণহানি। কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই, খাবারের খোঁজে বেরিয়ে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটিতে আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। শহরটি পুরোপুরি দখল করে বাসিন্দাদের জোরপূর্বক দক্ষিণে তথাকথিত কনসেন্ট্রেশন জোনে পাঠাতে চায় ইসরায়েল।
গত সোমবার ভোর থেকে নতুন করে শুরু হওয়া হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪ জন ছিলেন ত্রাণ সহায়তার অপেক্ষায়। গাজা সিটির আল-সাবরা এলাকায় হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিনজন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নিহতদের মধ্যে আছেন সাংবাদিক ইসলাম আল-কৌমি।
আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজযুম জানিয়েছেন, গাজার পূর্বাঞ্চলে লাগাতার গোলাবর্ষণ চলছে। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের হামলার ধরন ও মাত্রা স্পষ্ট করে দিচ্ছে, তারা গাজার ভৌগোলিক ও জনসংখ্যাগত কাঠামো পাল্টে দিতে চায়।”
তিনি আরও বলেন, “ভারী কামান, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন দিয়ে চলছে পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ। এসব হামলার উদ্দেশ্য গাজা শহরকে সম্পূর্ণভাবে বসবাসের অনুপযুক্ত করে তোলা।”
পুনরায় বাস্তুচ্যুত হয়ে অনেকেই দক্ষিণে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে অনেকেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই। এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি, বিলাল আবু সিত্তা বলেন, “দক্ষিণে যাওয়ার জন্য আমার কাছে অর্থ নেই। প্রায় ৯০০ ডলার লাগে, কিন্তু আমার কাছে এক ডলারও নেই।”
আরেক ফিলিস্তিনি নোয়ামান হামাদ বলেন, “আমরা ইসরায়েলের কাছ থেকে কিছু চাই না। শুধু চাই, আমাদের ঘরে ফেরার অনুমতি দিক।”
এমন ভয়াবহ প্রেক্ষাপটের মধ্যে কিছুটা আশার ইঙ্গিত মিলেছে। কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত একটি যুদ্ধবিরতির খসড়া চুক্তি মেনে নিয়েছে হামাস। সূত্র বলছে, এটি কার্যকর হলে দুই মাসের জন্য সংঘর্ষ বন্ধ থাকবে। সেইসঙ্গে মুক্তি দেওয়া হবে গাজায় আটক কিছু ইসরায়েলি এবং ইসরায়েলের কারাগারে থাকা কয়েকশ’ ফিলিস্তিনিকে।
তবে অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি বহুবারই ভঙ্গ করেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ জানুয়ারিতে হওয়া সীমিত যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল ভেঙে দিলে মার্চ থেকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, যা এখন মানবিক বিপর্যয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।