এক দফা আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে থাকা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, কেবল সরকার পরিবর্তন নয়—মূল লক্ষ্য হচ্ছে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার চূড়ান্ত বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর প্রতিষ্ঠা।
আজ সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলনের এক দফা ছিল—শুধু শেখ হাসিনার পতন নয়, পুরো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার অবসান। এক ফ্যাসিবাদী শাসন হটিয়ে আরেকটি ফ্যাসিবাদী শাসনের সম্ভাবনা রেখে আমরা ঘরে ফিরতে পারি না। এ দায়িত্ব নিয়েই আমরা ছাত্র, শ্রমিক, জনতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গড়েছি জাতীয় নাগরিক পার্টি।”
নাহিদ ইসলাম জানান, অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে আজকের এই সমাবেশ থেকে তারা ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা করছেন, যার মধ্যে রয়েছে ২৪ দফা কর্মপরিকল্পনা। তিনি বলেন, “আজ আমরা দ্বিতীয় রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২৪ দফা তুলে ধরছি। এর মধ্যে রয়েছে—নতুন সংবিধান প্রণয়ন, গণতান্ত্রিক সংস্কার, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, সেবামুখী প্রশাসন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার, ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্যের মর্যাদা, এবং জলবায়ু ও প্রবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ।”
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, “আমাদের রাজনীতি হলো সমস্যার সমাধানের রাজনীতি। আমরা দেশের প্রতিটি প্রান্তে মানুষের কথা শুনেছি। আমাদের রাজনীতি এমন হবে, যেখানে সব নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। প্রবাসীরাও ভোট দিতে পারবেন। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণ করে ভুল চিকিৎসা বন্ধ করা হবে।”
উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “বাহাত্তরের সংবিধান একটি দলের তৈরি। আমরা সেই ‘মুজিববাদী সংবিধান’ আর মানি না। নতুন সংবিধানের দাবি নিয়ে আজ আমরা এই মঞ্চে দাঁড়িয়েছি। শহীদদের রক্তের মূল্য দিতে হলে এই কাঠামো বদলাতেই হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এক বছর আগে এই শহীদ মিনারে যারা ছিল, আজ অনেকে শহীদ। তাদের পরিবারের পুনর্বাসন চাই। আহতদের চিকিৎসা চাই। এই রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের নিশ্চয়তা চাই।”
দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, বাধা দেওয়া হচ্ছে। ভয় পাবেন না, পিছু হটবেন না। রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। এনসিপি পিছিয়ে যাওয়ার দল নয়।”
এই সমাবেশে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, এনসিপি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়—বরং তা একটি নতুন প্রজন্মের সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার প্রতিফলন, যারা বিভাজনের রাজনীতি নয়, চায় অংশগ্রহণ, জবাবদিহি ও সংস্কারের একটি বাংলাদেশ।