নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আদালতের দণ্ডাদেশ প্রমাণ করেছে যে ‘ক্ষমতার অবস্থান যাই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়’—এ মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।
প্রেস উইংয়ের পাঠানো বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের আদালত আজ এমন ভাষায় বক্তব্য দিয়েছে যা দেশের ভেতর থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন পর্যন্ত প্রতিধ্বনি তুলেছে। জুলাই–আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষের প্রতি এটি সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার না হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ বছরের দমন–পীড়নে ক্ষতিগ্রস্ত গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনর্গঠনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে দেশ। নিরস্ত্র তরুণ-তরুণী ও শিশুদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তির প্রয়োগ রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যকার মৌলিক আস্থার সম্পর্ক ধ্বংস করেছিল।
অধ্যাপক ইউনূস যোগ করেন, প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন—তারা কেবল সংখ্যা নন; ছিলেন ছাত্র-ছাত্রী, বাবা-মা ও অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। আদালতে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণে দেখা গেছে কীভাবে হেলিকপ্টার থেকেও বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল। এই রায় তাদের দুর্ভোগের স্বীকৃতি এবং ন্যায়বিচারের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার পুনরায় ঘোষণা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আবারও বৈশ্বিক জবাবদিহির মূল স্রোতে যুক্ত হচ্ছে। পরিবর্তনের দাবিতে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের ত্যাগই আগামীর পথ তৈরি করছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, শুধু আইনি জবাবদিহি নয়—রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের মধ্যকার আস্থা পুনর্গঠন এখন জরুরি। মানুষ কেন প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য সবকিছু ঝুঁকিতে ফেলেছিল, তা বুঝে সেই আস্থার উপযোগী ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে। আজকের রায় সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন, সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে ন্যায়বিচার শুধু টিকবে না, বরং আরও শক্তিশালী হবে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ জুলাই–আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং তদন্তে সহযোগিতা করায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।