November 24, 2025, 12:35 am

প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল ৬: কার্বন বাজারে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও সবুজ উন্নয়ন নিশ্চিতের আহ্বান

  • Update Time : Friday, November 14, 2025
  • 13 Time View

ব্রাজিলের বেলেম থেকে শাহরিয়ার আরিফ:

ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত ৩০তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (COP30)-এর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ১৩ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, “আর্টিকেল ৬ অব প্যারিস চুক্তি – নিঃসরণ হ্রাসের পথনির্দেশনা : কার্বন বাজারে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও সবুজ উন্নয়ন নিশ্চিত করার দাবি” শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেশনটির মূল প্রতিপাদ্য ছিল – কার্বন বাজারে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা এবং সবুজ উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিঃসরণ হ্রাসের পথনির্দেশনা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাবিদ শফিউল্লাহর সভাপতিত্বে উক্ত সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়াউল হকের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদা আখতার বলেন,“সমন্বিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমেই প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল ৬ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাংলাদেশ তার নিজস্ব সক্ষমতা ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সহায়তায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় এগিয়ে যাবে—এ বিষয়ে আমি আশাবাদী।”

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন,“বাংলাদেশের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বর্তমানে প্রায় ৯০–৯৮ মিলিয়ন টন CO₂ সমতুল্য (২০২২), যা বৈশ্বিক নিঃসরণের মাত্র ০.৩৮%। সেক্টরভিত্তিকভাবে শক্তি খাত ৪৬%, কৃষি ৩৯%, শিল্প ৮% এবং বর্জ্য খাত ৭% নিঃসরণের জন্য দায়ী। ২০২২ সালের বেস ইয়ার অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট GHG নিঃসরণ ছিল ২৫২ মিলিয়ন টন CO₂e, যার মধ্যে শক্তি খাত ৪৮.৮১%, কৃষি, বন ও ভূমি ব্যবহার (AFOLU) ৩৭.৮৩%, এবং বর্জ্য খাত ১০.৬৯% অবদান রাখে। ২০৩৫ সালের NDC 3.0 লক্ষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে ১৫% গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি আরও বলেন,“আর্টিকেল ৬ বাংলাদেশের জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এটি শুধুমাত্র নির্গমন হ্রাসের কাঠামো নয়, বরং আন্তর্জাতিক কার্বন বাজারে অংশগ্রহণের একটি কৌশলগত সুযোগ। তবে এই বাজারে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও সবুজ উন্নয়ন অপরিহার্য।”

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাবিদ শফিউল্লাহ বলেন,“Article 6 দেশগুলোর মধ্যে নির্গমন বাণিজ্য, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও আর্থিক বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেকসই পরিবহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং কার্বন সংরক্ষণ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছে।”

প্যানেলিস্ট এর বক্তব্যে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর কো-অর্ডিনেটর শরীফ জামিল, বলেন, “বাংলাদেশ ও ব্রাজিল উভয় দেশেই স্থানীয় জনগণ ও নদীনির্ভর অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের সবুজ উন্নয়ন হতে হবে জনগণকেন্দ্রিক, যাতে পরিবেশ, অর্থনীতি ও ন্যায্যতা সমান গুরুত্ব পায়। কার্বন বাজারে অংশগ্রহণ মানে শুধু আর্থিক সুবিধা নয়; এটি হতে হবে ন্যায্য, স্বচ্ছ ও টেকসই বৈশ্বিক চুক্তির অংশ।”

প্যানেলিস্ট এর বক্তব্যে মিনিস্ট্রি অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ, সোমালিয়া এর প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী আহমেদ, বলেন,“আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যদি একসাথে কাজ না করে, তবে বৈশ্বিক নিঃসরণ হ্রাস সম্ভব নয়। Article 6 সেই যৌথ প্রচেষ্টার দিক নির্দেশনা দিচ্ছে।”

সমাপনী বক্তবে পরিবেশ অধিদপ্তর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন,“কার্যকর কার্বন বাজার গঠনের জন্য সঠিক ইমিশন ইনভেন্টরি, গবেষণালব্ধ ডেটা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।”

Spread the love
More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved
Theme Developed BY ThemesBazar.Com