November 23, 2025, 10:00 pm

বিধ্বস্ত ঘরে ফিরছেন গাজার মানুষ, শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরতি

  • Update Time : Saturday, October 11, 2025
  • 37 Time View

দীর্ঘ দুই বছর ধরে ইসরায়েলি নৃশংসতায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অবশেষে শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরতি। চুক্তি অনুযায়ী, গাজার নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির খবরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নিজ ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা।

মিসরের শারম আল শেখে দীর্ঘ আলোচনা শেষে হামাস ও ইসরায়েল বুধবার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। পরদিন শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর একই দিন স্থানীয় সময় দুপুর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

চুক্তির আওতায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেবে ইসরায়েল। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসের হাতে থাকা জীবিত ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। পরে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

এই যুদ্ধবিরতিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’র প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আলোচনায় হামাস ও ইসরায়েলের পাশাপাশি যোগ দেয় ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএলএফপি)।

দুই বছরে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের সময় মাত্র দুই মাস সাময়িক যুদ্ধবিরতি ছাড়া পুরো গাজাজুড়ে ইসরায়েল চালিয়ে গেছে নির্বিচার হামলা। জাতিসংঘের এক স্বাধীন তদন্ত কমিশন এই হামলাকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। গাজার ৯২ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ৫১৮টি স্কুল ও ৬৫৪টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। কৃষি জমির ৯৮ শতাংশ অচাষযোগ্য হয়ে পড়েছে।

ঘরে ফেরা, কিন্তু ঘর কোথায়?

যুদ্ধবিরতির পর মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবির থেকে অনেকেই ফিরছেন গাজা নগরীতে। ধ্বংসস্তূপ পেরিয়ে ফিরছেন ঘরে—যদিও ঘর বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই।

ফিরতি এক বাসিন্দা মেহেদি সাকলা বলেন, “জানি সব ধ্বংস হয়ে গেছে। তবু ঘরে ফেরার আনন্দ আলাদা। দুই বছর ধরে পালিয়ে বেড়িয়ে কষ্টের শেষ নেই।”

গাজায় ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার শুরু হলেও কিছু এলাকায় গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকায় বহু মানুষ এখনো ফিরতে ভয় পাচ্ছেন।

জিম্মি ও বন্দি বিনিময় শুরু

হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জন জিম্মির মধ্যে ২০ জন জীবিত এবং বাকিদের অনেকে মারা গেছেন বলে ধারণা করছে ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী জীবিতদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়া হবে। জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েল প্রকাশ করেছে ১ হাজার ৯৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দির তালিকা, যাঁদের মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।

সেনা প্রত্যাহারে ধোঁয়াশা

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার অধীনে তিন ধাপে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা থাকলেও অনেক বিশ্লেষক বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। প্রথম ধাপে ইসরায়েল ৫৩ শতাংশ এলাকা ছাড়বে, দ্বিতীয় ধাপে ৪০ শতাংশ এবং তৃতীয় ধাপে সীমান্তবর্তী ১৫ শতাংশ এলাকায় সেনা রেখে ‘নিরাপত্তা গণ্ডি’ গড়ে তুলবে। তবে কত দিন সেনারা সেখানে থাকবে, তা স্পষ্ট নয়।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ বড়

যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে গাজার পুনর্গঠন ও একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনকে। হামাস–নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেনা ছাড়ার পর এসব এলাকায় তারা নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করবে। এতে নতুন করে উত্তেজনার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা।

এ বিষয়ে পিএলও’র সাবেক নির্বাহী সদস্য হানান আশরাউই বলেন, “গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে পশ্চিম তীরে দখলদারি চালালে শান্তি সম্ভব নয়। এখন সময় ঐক্য গড়ে তোলার এবং প্রকৃত সমস্যাগুলোর সমাধান খোঁজার।”

Spread the love
More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved
Theme Developed BY ThemesBazar.Com