দীর্ঘ নির্বাসন জীবনের অবসান ঘটিয়ে প্রায় এক দশক পর দেশে ফিরেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল হক। রোববার সকালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা বিদেশে অবস্থানকালে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং শেখ হাসিনা সরকারের নির্যাতনের নানা ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। গত দশ বছরে তিনি বিভিন্ন কূটনৈতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থেকে দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবস্থান সুদৃঢ় করতে কাজ করেছেন।
২০১৯ সালে বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে তার আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। পরে ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহআন্তর্জাতিক সম্পাদক এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান তিনি। পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষ সহকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় তার উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে ছিল খালেদা জিয়ার কারাবন্দি ইস্যু, দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি এবং মানবাধিকার প্রশ্নে অস্ট্রেলিয়ার সিনেট ও নিম্নকক্ষের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ধারাবাহিক কূটনৈতিক যোগাযোগ। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানানো হলে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আল বেনেজি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বিবৃতি দেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে মোশন গৃহীত হয় এবং জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়। সর্বশেষ ৪৩ জন সিনেটর ও এমপি বাংলাদেশের নির্বাচন, র্যাব বিলুপ্তি এবং জুলাই অভ্যুত্থানে আহত-শহীদদের পুনর্বাসনের দাবিতে যৌথ বিবৃতি দেন।
এছাড়াও ১/১১-পরবর্তী সময় থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি নিয়মিতভাবে সেমিনার, আলোচনা সভা, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছেন—যা অনুষ্ঠিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বিভিন্ন স্টেটে। দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপির আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কূটনৈতিক কার্যক্রমে তার এই অবদান দলের হাইকমান্ড থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছেও প্রশংসিত হয়েছে।
বিএনপি নেতা রনি খান, যিনি মাদারীপুরের সন্তান এবং বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাস করছেন, তিনি বলেন— “রাশেদুল হকের দেশে ফেরা নিঃসন্দেহে আমাদের মাদারীপুর জেলাবাসীর জন্য আনন্দের বিষয়। মাদারীপুর বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি আমাদের গর্ব, কেননা বর্তমানে তিনিই একমাত্র মাদারীপুরের যিনি পূর্ণ সম্পাদক পদে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে আছেন।”
বিএনপির নেতাকর্মীদের মতে, দীর্ঘ এক দশক পর রাশেদুল হকের দেশে ফেরা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দেবে।