মিরপুরের কঠিন ও বোলিং সহায়ক উইকেট যেন ধাঁধা হয়ে উঠেছিল পাকিস্তানের জন্য। ব্যাটে বল আসছিল ধীরে, কিছু কিছু ডেলিভারি আবার আচমকা লাফিয়ে উঠছিল—ব্যাটারদের জন্য ছিল এক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে টিকতে না পেরে পথ হারায় পাকিস্তান, আর বাংলাদেশ দারুণ বোলিংয়ের মাধ্যমে জিতে নেয় রোমাঞ্চকর ম্যাচ ও তিন ম্যাচের সিরিজ।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ৮ রানে। এই জয়ের মাধ্যমে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ নিজেদের করে নেয় স্বাগতিকরা। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়।
১৩৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল ফাহিম আশরাফ অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলবেন। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ২৮ রান। রিশাদ হোসেনের করা ১৯তম ওভারের প্রথম পাঁচ বলে উঠে আসে ১৫ রান—দুইটি চার ও একটি ছয়ে। কিন্তু ওভারের শেষ বলেই তিনি বোল্ড করে দেন ফাহিমকে, যিনি ৩২ বলে খেলেন ৫১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। নিচু বল পুল করতে গিয়ে ব্যাটে লাগাতে না পারায় ফাহিমের ইনিংসের ইতি ঘটে এবং বাংলাদেশের জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়।
যদিও শেষ ওভারের প্রথম বলেই চার মেরে উত্তেজনা বাড়ান দানিয়েল, তবে বাকি বলগুলোতে বাংলাদেশ বোলাররা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখেন।
পাকিস্তানের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম ওভারেই ফখর জামানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন সাইম আইয়ুব। এরপর শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিবের দারুণ স্পেল ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়।
তানজিম টানা দুই বলে তুলে নেন হাসান নাওয়াজ ও মোহাম্মদ নাওয়াজকে—উভয়েই বাড়তি বাউন্সে লিটন দাসের গ্লাভসে ক্যাচ দেন। এর আগে তিনি এলবিডব্লিউ করেছিলেন মোহাম্মদ হারিসকে এবং শরিফুল ক্যাচে পরিণত করেন ফখর জামানকে।
মাত্র ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল পাকিস্তান। সালমান আলি আঘা ও খুশদিল শাহ জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও রান তুলতে ব্যর্থ হন। ২৩ বলে মাত্র ৯ রান করে সালমান ফিরেন শেখ মেহেদীর বলে, এরপর খুশদিলকেও ফেরান তিনিই।
পরে ফাহিম আশরাফ ও আব্বাস আফ্রিদি মিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। তাদের ৪১ রানের জুটিটি ভাঙেন শরিফুল। শেষ দিকে দানিয়েলকে সঙ্গে নিয়ে আবারও চেষ্টা চালান ফাহিম, তবে শেষরক্ষা হয়নি।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশেরও। মাত্র ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় দল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ান জাকের আলি অনিক ও শেখ মেহেদী হাসান। মেহেদী ২৫ বলে ৩৩ রান করে ফিরলেও, জাকের শেষ বল পর্যন্ত লড়ে ৪৮ বলে করেন ৫৫ রান। তার ইনিংসেই দাঁড়ায় ১৩৩ রানের সংগ্রহ, যা শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হয়।
এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে মিরপুর স্টেডিয়াম।
ছোট টার্গেটের ম্যাচও যে কতটা উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে—মিরপুরের এই থ্রিলার তার আরেক প্রমাণ।