আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
লিবিয়ার উপকূলীয় শহর আল-খুমসের কাছে দুটি নৌকা ডুবে চার বাংলাদেশিসহ বহু অনিয়মিত অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট নিশ্চিত করে জানায়, গত বৃহস্পতিবার ৯৫ জনকে বহনকারী দুটি নৌকা ডুবে যাওয়ার এ ঘটনা ঘটে।
প্রথম নৌকাটিতে ছিলেন ২৬ জন বাংলাদেশি; তাদের মধ্যে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। দ্বিতীয় নৌকায় ছিলেন ৬৯ জন যাত্রী—তাদের মধ্যে দুজন মিশরীয়, বাকিরা মূলত সুদানি। তবে এ নৌকার যাত্রীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে বিষয়ে রেড ক্রিসেন্ট বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
আল-খুমস শহরটি ত্রিপোলির পূর্বদিকে প্রায় ১১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অভিবাসন রুট হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই এ অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত।
এর আগে গত বুধবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, উত্তর-পশ্চিম উপকূলে আল-বুড়ি তেলক্ষেত্রের কাছে একটি রাবার বোট ডুবে কমপক্ষে ৪২ জন নিখোঁজ হয়েছেন এবং তাদের মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১১ সালে গাদ্দাফির পতনের পর থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথে লিবিয়া অভিবাসীদের প্রধান ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়। যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং অস্থিতিশীলতা থেকে পালিয়ে হাজারো মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে এ বিপদসঙ্কুল পথ বেছে নেয়।
রেড ক্রিসেন্টের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে—কালো ব্যাগে মোড়ানো লাশগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা, আর স্বেচ্ছাসেবকেরা উদ্ধার হওয়া মানুষদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, কম্বল জড়িয়ে মেঝেতে বসে আছেন উদ্ধারকৃত অভিবাসীরা। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় কোস্ট গার্ড ও খুমস বন্দর নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ। উদ্ধার হওয়া লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে।
লিবিয়ার উপকূলে এর আগেও একাধিক বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি ৬১ জন অভিবাসীর লাশ উদ্ধার করা হয়। সেপ্টেম্বরে ৭৫ জন সুদানি শরণার্থী নিয়ে যাওয়া নৌকায় আগুন ধরে কমপক্ষে ৫০ জনের মৃত্যু হয়।
লিবিয়ার অভিবাসী আটককেন্দ্রগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগও বাড়ছে। গত সপ্তাহে জেনেভায় জাতিসংঘের বৈঠকে যুক্তরাজ্য, স্পেন, নরওয়ে, সিয়েরা লিওনসহ কয়েকটি দেশ লিবিয়াকে এসব কেন্দ্র বন্ধের আহ্বান জানায়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এসব কেন্দ্রে অভিবাসীরা নির্যাতন, সহিংসতা এমনকি হত্যার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।