আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণ বিকৃতভাবে সম্প্রচার করার অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ গণমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি)। এর জেরে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং হেড অব নিউজ ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
টিম ডেভি পাঁচ বছর ধরে বিবিসির নেতৃত্বে ছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংস্থাটিকে ঘিরে পক্ষপাতিত্ব ও সম্পাদকীয় নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক চলছিল। দুই শীর্ষ কর্মকর্তার একসঙ্গে পদত্যাগ করা বিবিসির ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রকাশিত ফাঁস হওয়া এক নথিতে বলা হয়, বিবিসির অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান প্যানোরামা-তে ট্রাম্পের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির একটি ভাষণকে বিকৃতভাবে সম্পাদনা করে সম্প্রচার করা হয়। দুটি আলাদা অংশ কেটে জোড়া লাগিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন ট্রাম্প সরাসরি ক্যাপিটল হিলে সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর রাজনৈতিক মহল থেকে বিবিসির ওপর চাপ বাড়ে। ট্রাম্প নিজেও এই পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়ে বিবিসিকে “গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর অসৎ প্রতিষ্ঠান” বলে মন্তব্য করেন।
রোববার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টিম ডেভি বলেন, “বিবিসি নিখুঁত নয়। আমাদের আরও স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ হতে হবে। সাম্প্রতিক বিতর্ক আমার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। কিছু ভুল হয়েছে—আর তার দায়ভার সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমার।”
সংবাদ বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস বলেন, “প্যানোরামা-কে ঘিরে বিতর্ক এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যা বিবিসির ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে। জনজীবনের নেতৃত্বে থাকা মানুষ হিসেবে আমার জবাবদিহি থাকা উচিত, তাই আমি পদত্যাগ করছি।”
দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রকাশিত নথিতে আরও দাবি করা হয়, বিবিসির আরবিক বিভাগে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের প্রতিবেদনে পক্ষপাতমূলক মনোভাব ও সম্পাদকীয় দুর্বলতা রয়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এক সাবেক উপদেষ্টা মাইকেল প্রেসকট ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেছেন।
তিনি একইসঙ্গে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে বিবিসির কাভারেজকেও “একপেশে” বলে অভিহিত করেন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের ৬ জানুয়ারির মূল ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “আমরা ক্যাপিটলে যাব এবং আমাদের সাহসী কংগ্রেস সদস্যদের উৎসাহ দেব।” কিন্তু বিবিসির সম্প্রচারিত সংস্করণে সেটি এভাবে দেখানো হয়: “আমরা ক্যাপিটলে যাব… আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব। আর আমরা লড়ব, কঠিনভাবে লড়ব।” প্রকৃতপক্ষে এই দুটি বাক্যের মধ্যে প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধান ছিল, যা সম্পাদনার মাধ্যমে একত্রে উপস্থাপন করা হয়।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস বিবিসিকে “একশ শতাংশ মিথ্যা সংবাদ পরিবেশক” বলে আখ্যা দিয়েছে।