November 23, 2025, 5:37 pm

বিদেশি ঘাঁটি থেকে চুপিসারে সৈন্য প্রত্যাহার করলো ভারত

  • Update Time : Saturday, November 8, 2025
  • 30 Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

তাজিকিস্তানের আয়নি বিমানঘাঁটি থেকে নিজেদের সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম নীরবে সরিয়ে নিয়েছে ভারত। এর মধ্য দিয়ে মধ্য এশিয়ায় দুই দশক ধরে চলা নয়াদিল্লির সামরিক উপস্থিতির সমাপ্তি ঘটল। ভারতীয় দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালেই ঘাঁটি খালি করার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসে। এতে ভারতের আঞ্চলিক কৌশলগত প্রভাব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

আয়নি বিমানঘাঁটি: ভারতের কৌশলগত ঘাঁটি

তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবের কাছে অবস্থিত আয়নি বিমানঘাঁটিটি সোভিয়েত আমলে নির্মিত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর এটি অচল হয়ে পড়ে। ২০০২ সালে ভারত তাজিকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে ঘাঁটিটি আধুনিকায়নের দায়িত্ব নেয়। প্রায় ৮ কোটি ডলার ব্যয়ে ভারতীয় বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও) সেখানে ৩২০০ মিটার রানওয়ে, বিমান হ্যাঙ্গার, জ্বালানি ডিপো ও এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার তৈরি করে।

ঘাঁটিটি আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডোর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে, যা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মির ও চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাছাকাছি। ফলে এটি ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক অবস্থান ছিল, যা পাকিস্তান ও চীনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে কৌশলগত সুবিধা দিত। সর্বোচ্চ সময়ে সেখানে প্রায় ২০০ ভারতীয় সামরিক সদস্য ও কয়েকটি সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান মোতায়েন ছিল।

কেন প্রত্যাহার করল ভারত

সরকারি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আয়নি ঘাঁটিতে ভারতের উপস্থিতি ছিল তাজিকিস্তানের সঙ্গে সীমিত সহযোগিতা চুক্তির অংশ, যার মেয়াদ ২০২২ সালে শেষ হয়। চুক্তি শেষে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘাঁটিটি তাজিক সরকারের কাছে হস্তান্তর করে।

তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে তাজিকিস্তান ভারতের সঙ্গে চুক্তি নবায়নে আগ্রহ দেখায়নি। ফলস্বরূপ, ভারত ধীরে ধীরে সৈন্য ও সরঞ্জাম সরিয়ে নেয়, যা সম্পূর্ণভাবে নীরবে সম্পন্ন হয়।

কৌশলগত প্রভাবের প্রশ্ন

আয়নি বিমানঘাঁটি ছিল ভারতের একমাত্র সক্রিয় বিদেশি সামরিক ঘাঁটি। এটি ভারতের মধ্য এশিয়ায় উপস্থিতির প্রতীক ও কৌশলগত ক্ষমতার প্রকাশ ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘাঁটি হারানো ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ও সামরিক ধাক্কা, যা ওই অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলায় ভারতের সক্ষমতা সীমিত করবে।

বর্তমানে ভারতের বিদেশি ঘাঁটি

বর্তমানে ভারতের কোনো পূর্ণাঙ্গ বিদেশি সামরিক ঘাঁটি নেই। তবে ২০২৪ সালে মরিশাসের আগালেগা দ্বীপে ভারত যৌথভাবে একটি উন্নত বিমানবন্দর ও জেটি উদ্বোধন করেছে। এটি ভারতের নৌবাহিনীর জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসেবে কাজ করছে, যেখানে পি-৮আই সামুদ্রিক নজরদারি বিমান ও ডর্নিয়ার বিমানের কার্যক্রম চলছে।

এ ছাড়া ভারত ভুটানে একটি সামরিক প্রশিক্ষণ দল মোতায়েন রেখেছে, যারা রয়্যাল আর্মি ও রয়্যাল বডিগার্ড বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়।

অতীতে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধ এবং ১৯৮০-এর দশকে শ্রীলঙ্কায় ইন্ডিয়ান পিস কিপিং ফোর্স (আইপিকেএফ) মিশনের সময় ভারত অস্থায়ী সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করেছিল।

অন্যদিকে চীন বর্তমানে জিবুতিতে স্থায়ী বিদেশি ঘাঁটি চালাচ্ছে এবং তাজিকিস্তানেও একটি ঘাঁটি নির্মাণ করছে বলে ধারণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করে—যার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ক্যাম্প হামফ্রিস, কাতারের আল উদেইদ ও জার্মানি-জাপানের একাধিক ঘাঁটি উল্লেখযোগ্য।

সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

Spread the love
More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved
Theme Developed BY ThemesBazar.Com