নিজস্ব প্রতিবেদক:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই নতুন প্রশ্ন উঠেছে—দলটি যদি সরকার গঠন করে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? খালেদা জিয়া, নাকি তারেক রহমান?
সোমবার (৩ নভেম্বর) ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অপরদিকে, তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করছেন।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৯১ সালে রাজনীতির মূল নেতৃত্বে আসেন খালেদা জিয়া। অন্যদিকে, তারেক রহমান এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেটি অনুষ্ঠিত হয়নি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের পর বিএনপি তাকে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করে। তখন থেকেই লন্ডননির্বাসিত তারেক রহমান দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
দলীয় সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। ধারণা করা হয়েছিল, তিনি প্রতীকীভাবে একটি আসনে প্রার্থী হবেন। কিন্তু এবার তিনটি আসনে তার প্রার্থিতা ঘোষণা করে বিএনপি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব এখনো খালেদা জিয়ার হাতেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, “খালেদা জিয়াকে একাধিক আসনে প্রার্থী করা আসলে একটি রাজনৈতিক বার্তা—তিনি এখনো সক্রিয় এবং দলটি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাচ্ছে। একইসঙ্গে তার জনপ্রিয় ভাবমূর্তি কাজে লাগানোর কৌশলও এখানে রয়েছে।”
তবে তিনি যোগ করেন, “তারেক রহমান এখনো দেশে না ফেরায় তার ভূমিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।”
দলটির একাধিক নেতার মতে, বিএনপি জয়ী হলে সরকার পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমানই। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি বলেন, “দলের ভেতরে এখন যে ধারণা তৈরি হয়েছে, তাতে জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তারেক রহমানকেই বেছে নেওয়া হবে।”
তবে সবকিছুই নির্ভর করছে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময়ের ওপর। তিনি কবে ফিরবেন, সে বিষয়ে দল এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি এখন এমন এক অবস্থানে আছে যেখানে খালেদা জিয়া দলীয় ঐক্যের প্রতীক, আর তারেক রহমান ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু। ফলে, জয়ী হলে মা-ছেলের এই যুগল নেতৃত্বই হতে পারে বিএনপির নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা।