নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতারণার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুই কেবিন ক্রু আলোচনায় এসেছেন। এর মধ্যে ফ্লাইট স্টুয়ার্ড জিসান আহমেদ ছাকিনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব, আর কেবিন ক্রু খাদিজা সুলতানা শিমু আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন।
নারী সহকর্মীর সঙ্গে প্রতারণা ও পর্নোগ্রাফি আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছাকিনকে মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে র্যাব-১ গ্রেফতার করে। পরে তাকে উত্তরা পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়।
ওসি মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ছাকিনের বিরুদ্ধে আদালতের পরোয়ানা ছিল, সে অনুযায়ী র্যাব তাকে গ্রেফতার করে। বুধবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ছাকিনের বিরুদ্ধে পূর্বেও একই নারী সহকর্মীর সঙ্গে প্রতারণা ও ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। জামিনে মুক্ত হওয়ার পরও তিনি পুনরায় হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ান। এমনকি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে নিজেকে ওই নারীর স্বামী দাবি করে হয়রানি করছিলেন।
ভুক্তভোগী নারী জানান, পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের কথা চলছিল এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাগদানও হয়। তবে ছাকিন সুযোগ নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে এবং সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেন। এরপর হ্যাকিং ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে মানসিকভাবে নির্যাতন চালাতে থাকেন।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছাকিনের বিরুদ্ধে চলমান বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে দায়ের হওয়া এক মামলায় কেবিন ক্রু খাদিজা সুলতানা শিমুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এরপর থেকেই তিনি পলাতক। সহকর্মীদের ভাষ্যমতে, তিনি ছদ্মবেশে (বোরকা পরে) বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন।
মামলার বাদী, এক বিমান প্রকৌশলী ওমর ফারুক চৌধুরী, অভিযোগ করেছেন— ফেসবুকের মাধ্যমে শিমুর সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং ১১ মাসের সম্পর্কের মধ্যে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন শিমু।
মামলার নথিতে বলা হয়, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বাদীর কাছ থেকে নগদ টাকা, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং ও বিভিন্ন উপহার (যেমন হীরার আংটি, আসবাব, মোবাইল ফোন ইত্যাদি) নিয়েছেন। পরবর্তীতে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অতিরিক্ত স্বর্ণ ও অর্থ দাবি করেন।
বাদী আরও অভিযোগ করেছেন, শিমু ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও চেয়ে নিয়ে পরবর্তীতে সেগুলো ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করেন। আদালত মামলাটি দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ৪০৬ (বিশ্বাসভঙ্গ) ও ৫০৬ (ভীতি প্রদর্শন) ধারায় গ্রহণ করেন এবং তদন্ত শেষে রিপোর্টের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. সাফিকুর রহমান বলেন, “এসব অভিযোগ আমাদের জন্য বিব্রতকর। একজনের শাস্তি দেখে যদি অন্যরা শিক্ষা না নেয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।” তিনি আরও জানান, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তাদের চাকরিচ্যুতসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিমানের কেবিন ক্রুদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ও আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ বাড়লেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা ইজ্জতের ভয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে সাহস পাননি। তবে এবার দুইটি মামলায় পর্যাপ্ত তথ্য–প্রমাণ (ছবি, ভিডিও ও লেনদেনের নথি) জমা পড়ায় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে বিমান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।