নিজস্ব প্রতিবেদক:
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে গুরুত্বপূর্ণ আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই শুনানি শুরু হয়।
আবেদনের পক্ষে শুনানি করছেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, আর রাষ্ট্রপক্ষে থাকছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে, গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দিয়েছিল আদালত। সেই প্রেক্ষিতে একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা আপিল দায়ের করেন।
আপিলকারীদের মধ্যে রয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া, জাহরা রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রথমে ১৯৯৬ সালে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হয়। তবে এই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ কয়েকজন হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট রুল জারি করে এবং পরে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রিট খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে।
তবে এরপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করে। এর ভিত্তিতে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয় পঞ্চদশ সংশোধনী, যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়।
২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক মহল। এবার সুপ্রিম কোর্টে শুরু হওয়া এই শুনানি দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, এই শুনানির রায়ের ওপর পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের কাঠামো ও রাজনৈতিক সমঝোতার রূপরেখা অনেকটাই নির্ভর করবে। এখন দেখা যাবে, আদালত সংবিধানের আলোকে কী সিদ্ধান্ত দেয় এবং সেটি কীভাবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রতিফলিত হয়।