নিজস্ব প্রতিবেদক
গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আজ (রোববার, ১২ অক্টোবর) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ যুক্তিতর্ক শুনবেন।
প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানিয়েছেন, প্রথমে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন)। এরপর স্টেট ডিফেন্স অ্যাটর্নিরা আসামিপক্ষের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবেন। সর্বশেষ পর্যায়ে প্রসিকিউশন তাদের যুক্তি খণ্ডন করবেন। এই ধাপ শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হবে। তবে ট্রাইব্যুনালের অনুমতির ভিত্তিতে যুক্তিতর্ক সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে গত ৮ অক্টোবর জেরা শেষ করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
মোট ২৮ কার্যদিবসে মামলার ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। শেষ সাক্ষী হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর নিজের জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, গত বছরের আন্দোলনের সময় ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় ব্যবহৃত হয়েছে মারণাস্ত্র।
তিনি আরও জানান, জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার ওপর ছোড়া হয়েছিল তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি। এছাড়া, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের বিরুদ্ধে চালানো হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র এবং যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদনের ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়।
মামলায় ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাবেক আইজিপি মামুন নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ আনে।
৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার এ মামলার অভিযোগনামায় রয়েছে ২,০১৮ পৃষ্ঠার তথ্যসূত্র, ৪,০০৫ পৃষ্ঠার জব্দতালিকা ও প্রমাণাদি এবং ২,৭২৪ পৃষ্ঠার শহীদদের তালিকা। সাক্ষী করা হয়েছে মোট ৮১ জনকে।
গত ১২ মে মামলার প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। যুক্তিতর্ক শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষায় যাবে বলে জানা গেছে।