অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শ্রম সংস্কার বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য শ্রম খাতের সংস্কারকে তিনি অপরিহার্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে আয়োজিত এক নৈশভোজ আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় শ্রম অধিকার ও সংস্কার বিষয়ক আলোচনার জন্য।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, এ উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় কূটনীতিক, জাতিসংঘ কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশের তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। তারা শ্রম আইন, শ্রমিক অধিকার এবং সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
আইএলও মহাপরিচালকসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও এতে বক্তব্য রাখেন। আলোচনায় শ্রম সংস্কারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক অবস্থান আরও শক্তিশালী করার সম্ভাবনার কথা উঠে আসে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গার্মেন্টস খাত দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। ভবিষ্যতের যে কোনো সরকারকে এই খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের জানান, তাদের দলের বহু নেতাকর্মী সরাসরি গার্মেন্টস খাতের সঙ্গে যুক্ত। তারা শ্রম সংস্কার এজেন্ডার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, নির্বাচিত হলে এ কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির শ্রম সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও ভবিষ্যতে তা বিস্তৃত করার পক্ষে মত দেন।
সব বক্তাই গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিপণ্যের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। তাদের মতে, শুধু ক্রেতাদের শর্ত নয়, বরং বাংলাদেশেরও নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরার সময় এসেছে।
ন্যাশনাল সিটিজেন্স পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ নেত্রী ডা. তাসনিম জারা রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি জানান, চিকিৎসা শিক্ষার্থী হিসেবে আহতদের সেবা দিতে গিয়ে শ্রমিকদের দুর্দশা কাছ থেকে দেখেছেন। সেই অভিজ্ঞতাই তার রাজনৈতিক যাত্রার সূচনা করে।
শেষে অধ্যাপক ড. ইউনূস শ্রম সংস্কার বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন-পূর্ব এই সময়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তব সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই সংস্কার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে আরও শক্তিশালী করবে।