ইসরায়েলের প্রধান মিত্র হিসেবে পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার চরম এক বার্তা দিলেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েলকে তিনি পশ্চিম তীর দখল করতে দেবেন না।
আজ শুক্রবার (স্থানীয় সময়) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর আগেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখলে নিতে দেব না… এরকম কিছুই হবে না। অনেক হয়েছে, এখন থেমে যাওয়ার সময় এসেছে।”
হোয়াইট হাউসে দেওয়া ওই বক্তব্যে ট্রাম্প আরও জানান, গাজায় একটি শান্তি চুক্তি ‘চূড়ান্ত হওয়ার পথে’ রয়েছে। তিনি বলেন, তিনি ইতোমধ্যে নেতানিয়াহু ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
আগামী সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসবেন ট্রাম্প। এরইমধ্যে তার প্রশাসন ইসরায়েলকে জানিয়ে দিয়েছে, পশ্চিম তীর দখলের যে কোনো পদক্ষেপের ‘নেতিবাচক পরিণাম’ হতে পারে।
ইসরায়েলের ডানপন্থী জোট সরকার সম্প্রতি অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের মানচিত্রে সংযুক্ত করার ব্যাপারে জোরালো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্য ও জার্মানি ইতোমধ্যেই ইসরায়েলকে এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও সোমবার তার বক্তব্যে বলেন, “ইসরায়েলের এ ধরনের উদ্যোগ নৈতিক, আইনি ও রাজনৈতিক দিক থেকে অসহনীয়।”
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ায় ইসরায়েলের ওপর চাপ আরও বেড়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহান জানান, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিষয়টির ঝুঁকি ও পরিণতি সম্পর্কে ভালো করেই জানেন।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় শুরু হয় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলা। এতে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাবে, গাজায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এখন ‘ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর’ দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছেন।
বুধবার ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও জর্ডানের মধ্যে একমাত্র স্থল সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি কার্যত বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটিকে ‘বিকৃত ও মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘে ভিডিও বার্তায় ফ্রান্সের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে তাকে নিউইয়র্কে সশরীরে আসার ভিসা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
সব মিলিয়ে, পশ্চিম তীর দখল, গাজায় যুদ্ধ এবং মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে। আর সেই চাপকে আরও জোরালো করলেন নেতানিয়াহুর বন্ধু হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প নিজেই।