নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। সহিংসতা ও জননিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে থাকায় কারফিউয়ের আওতা আরও বিস্তৃত করেছে দেশটির প্রশাসন।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) জেন-জির নেতৃত্বাধীন তরুণদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা সংসদ ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তীব্র ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে।
নেপালের চিফ ডিস্ট্রিক্ট অফিসার ছবিলাল রিজালের জারি করা আদেশ অনুযায়ী, আজ দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ কার্যকর থাকবে।
প্রাথমিকভাবে বানেশ্বর এলাকায় কারফিউ জারি করা হলেও পরবর্তীতে তা প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন শীতল নিবাস, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বলুয়াটার, মহারাজগঞ্জ, লায়নচাওর, সিংহ দরবারসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিস্তৃত করা হয়।
কারফিউ চলাকালে এসব এলাকায় জনসমাগম, প্রতিবাদ, ঘেরাও কিংবা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার নাগরিকদের ঘরে থাকার এবং আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
সংঘাতের সূচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদ থেকে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অ্যাপ বন্ধ করে দেয় নেপাল সরকার। সরকারের দাবি, এসব মাধ্যম নেপালের আইনি কাঠামো অনুযায়ী নিবন্ধন না করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, টিকটক, ভাইবারসহ পাঁচটি প্ল্যাটফর্ম ইতোমধ্যে নিবন্ধন করে কার্যক্রম চালালেও ফেসবুক ও ইউটিউব এখনও নিষ্ক্রিয়। জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকায় তরুণদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়।
সোমবার শুরু হওয়া বিক্ষোভে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পুনরায় চালু করা এবং সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য—”নেট বন্ধ না করে দুর্নীতি বন্ধ করুন।”
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব্যারিকেড বসালেও, তারা তা ভেঙে এগিয়ে আসে। পরিস্থিতি সহিংস রূপ নিলে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন নিহত হয় বলে স্থানীয় দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়। আহত হয়েছেন আরও অনেকে, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
নেপাল সরকার জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে।