বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) উপ-পরিচালক (ডিডি) রাশিদা সুলতানার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাকে পদাবনতি ও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সূত্রমতে, বিগত সরকার আমলে রাশিদা সুলতানা নিজেকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে কর্মস্থলে প্রভাব বিস্তার করতেন। তিনি সহকর্মীদের মাঝে প্রচার করতেন যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ‘কন্যার মতো’ স্নেহ করেন। এমন দাবির আড়ালে তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্ব্যবহার চালিয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পট পরিবর্তনের পর তার প্রভাব কিছুটা হ্রাস পেলেও, আচরণে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিদার অসদাচরণ ও নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
চিঠিতে জানানো হয়, রাশিদাকে পঞ্চম গ্রেডে অবনমিত করা হয়েছে এবং একইসঙ্গে তাকে ‘তিরস্কার’ সূচক শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। এছাড়া তার বেতন কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
রাশিদা সুলতানা বেবিচকের এভসেক ট্রেনিং অ্যান্ড সার্টিফিকেশন বিভাগে উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে পরবর্তীতে তাকে পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে সংযুক্ত করা হয়। সেখানে গিয়েও তিনি অনিয়ম বন্ধ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, রাশিদা সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, সংখ্যালঘুদের কটাক্ষ, গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করতেন। এছাড়া ২০২০-২১ এবং ২০২২ সালের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) সময়মতো না জমা দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও তিনি তা উপেক্ষা করেন।
অভিযোগ আরও রয়েছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের তৎকালীন ব্যবস্থাপক ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে লাঞ্ছিত ও হুমকি দেন রাশিদা। এ ছাড়া সরকারি দুটি বাসভবন ও একাধিক গাড়ি নিজের দখলে রাখার বিষয়েও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
বেবিচকের সাবেক সদস্য (নিরাপত্তা) আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফীর সময়ে, গুরুতর আচরণগত অভিযোগের ভিত্তিতে রাশিদার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল বোর্ডে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি সেটি মানেননি।
বেবিচকের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, আনুষ্ঠানিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংস্থার বিধিমালা অনুযায়ী তাকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।