মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা বা সাংবাদিকতার উদ্দেশ্যে ভিসা পাওয়া বিদেশি নাগরিকদের জন্য সামনে আসছে নতুন বাধা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যেখানে শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী এবং সাংবাদিকদের ভিসার মেয়াদ সীমিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার প্রকাশিত প্রস্তাবিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, এই পরিবর্তনের লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ভিসাধারীদের ওপর আরও কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বর্তমানে শিক্ষার্থী ভিসা (F), বিনিময় কর্মসূচির (J) এবং সংবাদমাধ্যমকর্মীদের (I) ভিসার মেয়াদ সংশ্লিষ্ট কোর্স বা চাকরির সময়কাল অনুযায়ী নমনীয় থাকে। তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী- শিক্ষার্থী ও বিনিময় কর্মীদের ভিসা সর্বোচ্চ চার বছরের জন্য বৈধ থাকবে। সাংবাদিকদের ভিসা কমিয়ে আনা হবে ২৪০ দিন পর্যন্ত। চীনা নাগরিকদের জন্য এই মেয়াদ আরও কমিয়ে মাত্র ৯০ দিন নির্ধারণ করা হবে। ভিসাধারীরা মেয়াদ শেষ হলে নবায়নের জন্য আবেদন করতে পারবেন, তবে প্রতিবারই নতুনভাবে আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালীন সময় আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করা সম্ভব হবে। এটি অভিবাসন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও দাবি করা হয়েছে।
মার্কিন সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে প্রায় ১৬ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী F ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। ৩ লাখ ৫৫ হাজার বিনিময় কর্মী এবং ১৩ হাজার বিদেশি সাংবাদিক J ও I ভিসা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ সরাসরি প্রভাবিত হবেন।
এই ধরনের উদ্যোগ নতুন নয়। ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসন একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। পরবর্তীতে জো বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়।
আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিষয়ক সংস্থা NAFSA, যা বিশ্বের ৪ হাজার ৩০০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, আগেও এই ধরনের উদ্যোগের বিরোধিতা করে বলেছিল— এটি শিক্ষা, বিনিময় ও মুক্ত সাংবাদিকতার চেতনার পরিপন্থী।
রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের আগের মেয়াদেও বৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। অনেক শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল হয়েছে শুধু রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে। এছাড়া অনেকের গ্রিন কার্ডও বাতিল করা হয়েছে।
সম্প্রতি, ২২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা (USCIS) ঘোষণা দিয়েছে, তারা আবারও নাগরিকত্ব আবেদনকারীদের বাসস্থান সরেজমিনে যাচাই শুরু করবে, যা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এতে তাদের নৈতিক চরিত্র, বসবাসের সত্যতা এবং মার্কিন মূল্যবোধে আস্থার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
প্রস্তাবিত এই নীতিমালার ওপর ৩০ দিনের মধ্যে জনমত দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এরপর প্রশাসন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।