November 24, 2025, 1:55 am

গাজায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে, অপুষ্টিতে আরও ১০ জনের মৃত্যু

  • Update Time : Thursday, August 28, 2025
  • 24 Time View

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে “মানবসৃষ্ট বিপর্যয়” আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেছে, যেখানে প্রতিদিনই অনাহারে মানুষের মৃত্যু ঘটছে। সম্প্রতি সেখানে অপুষ্টি ও ক্ষুধায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় এখন অন্তত এক লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩ হাজারের বেশি শিশু আগামী কয়েক মাসে সরাসরি মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক উপপ্রধান জয়েস মুসুইয়া নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, “উত্তর-মধ্য গাজা, বিশেষ করে গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এটি দক্ষিণের দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে গাজায় ৫ লাখেরও বেশি মানুষ অনাহার ও মৃত্যুর আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

মুসুইয়া জোর দিয়ে বলেন, “এই দুর্ভিক্ষ কোনো খরা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফল নয়— এটি সম্পূর্ণরূপে মানবসৃষ্ট, সংঘাতের ফল। ইচ্ছাকৃতভাবে সহায়তা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, আর এর মূল্য দিচ্ছে নিরপরাধ শিশু ও সাধারণ মানুষ।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টি ও অনাহারে মৃতের সংখ্যা এখন ৩১৩ জন, যার মধ্যে ১১৯ জন শিশু।

জাতিসংঘ সমর্থিত দুর্ভিক্ষ পর্যবেক্ষণ সংস্থা IPC (ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন) গাজায় ভয়াবহ খাদ্য সংকটের সতর্কতা দিয়েছে। তবে ইসরায়েল এই প্রতিবেদন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এডেন বার টাল প্রতিবেদনটিকে “ত্রুটিপূর্ণ ও অপেশাদার” বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি ১৪টি সদস্য রাষ্ট্র IPC–র বিশ্লেষণকে সমর্থন জানিয়েছে। তারা গাজায় অবিলম্বে “দুর্ভিক্ষ বন্ধ এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি” কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে।

শিশু সুরক্ষা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন–এর প্রধান ইঙ্গার অ্যাশিং বলেন, “গাজায় পরিকল্পিতভাবে দুর্ভিক্ষ তৈরি করা হয়েছে। শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে, যা যুদ্ধের কৌশল হিসেবেই ক্ষুধাকে ব্যবহার করার শামিল।”

তিনি জানান, গাজার হাসপাতালে কঙ্কালসার শিশুরা ভর্তি, যাদের অনেকেই এতটাই দুর্বল যে ব্যথায় কাঁদতেও পারছে না। অনেক শিশু নিস্তব্ধ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

অ্যাশিং আরও বলেন, “আগে শিশুদের আঁকায় দেখা যেত শান্তি, শিক্ষা আর স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। এখন তারা শুধু খাবারের ছবি আঁকে। কেউ কেউ এমনকি মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে।”

Spread the love
More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved
Theme Developed BY ThemesBazar.Com