পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির বাস্তব উদাহরণ তৈরি করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক শরীফুল এ খান। কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি পৌঁছেছেন এক অনন্য উচ্চতায়—সম্প্রতি তিনি পদোন্নতি পেয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
এই অর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাস গড়েছেন, কারণ মার্কিন সামরিক বাহিনীতে তিনিই প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কর্মকর্তা, যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পদে উন্নীত হলেন। তার এই সাফল্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে পেন্টাগনে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তাকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এম. ওসমান সিদ্দিক। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেন, “বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মেধাবী সেনা কর্মকর্তা শরীফুল খান মার্কিন সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়ে বিশ্ব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছেন।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, যুক্তরাষ্ট্র স্পেস ফোর্সের ভাইস চিফ অব স্পেস অপারেশন্স জেনারেল শন ব্রাটন অনুষ্ঠানে শরীফুল খানকে শপথ পাঠ করান।
বর্তমানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফুল পেন্টাগনে ‘গোল্ডেন ডোম ফর আমেরিকা’-র ডিরেক্টর অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পদে তিনি কৌশলগত নীতিনির্ধারণ, আন্তঃসংস্থাপন সমন্বয় এবং প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও জোরদার হচ্ছে।
শরীফুল খান ১৯৯৭ সালে ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স একাডেমি থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ওয়েবস্টার ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স কলেজ, এমআইটি, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি, নেভাল ওয়ার কলেজসহ বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন।
তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ, স্যাটেলাইট অপারেশন, স্পেস সিস্টেম এবং লঞ্চ কমান্ডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সালে তিনি কুয়েতের আলি আল সালেম বিমান ঘাঁটিতে এবং ২০০৭ সালে ‘অপারেশন সাইলেন্ট সেন্ট্রি’-তে ডিপ্লয়মেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শরীফুল এর আগে কলোরাডোর শ্রিভার স্পেস ফোর্স বেসে ৩১০তম স্পেস উইং-এর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যেখানে প্রায় দেড় হাজার সামরিক সদস্য এবং ১৯টি ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তার ওপর।
তার উল্লেখযোগ্য সামরিক পদগুলোর মধ্যে রয়েছে: ৫ম স্পেস অপারেশনস স্কোয়াড্রনের অপারেশনস অফিসার, ২১তম স্পেস অপারেশনস স্কোয়াড্রনের এক্সিকিউটিভ অফিসার, ৩৭৯তম স্পেস রেঞ্জ স্কোয়াড্রনের কমান্ডার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এয়ার ফোর্স স্ট্র্যাটেজি ডিভিশনের ডেপুটি, স্পেস ট্রেনিং অ্যান্ড রেডিনেস কমান্ডে মোবিলাইজেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট।
শরীফুল তার বীরত্ব ও পেশাগত উৎকর্ষের জন্য বহু সামরিক পদকে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: লেজিয়ন অব মেরিট, ডিফেন্স মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডেল, মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডেল, জয়েন্ট সার্ভিস কমেন্ডেশন মেডেল, আর্মড ফোর্সেস এক্সপেডিশনারি মেডেল, এবং এয়ার অ্যান্ড স্পেস অ্যাচিভমেন্ট মেডেল।