বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো ও দ্রুত অগ্রসরমান জাহাজ নির্মাণ শিল্পে চীন সরকারের বিনিয়োগ আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
সোমবার চীনের পরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। বৈঠকে চীনের ভাইস মিনিস্টার মি. লি ইয়াংসহ উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) জন্য চীনের সঙ্গে সরকার-থেকে-সরকার (জিটুজি) ভিত্তিতে চারটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়া বিএসসির সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিজস্ব অর্থায়নে আরও দুটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই জাহাজগুলো চায়না জিং জিয়াং নানায়ং শিপ বিল্ডিং কোং লিমিটেড থেকে ফাস্ট ট্র্যাক ভিত্তিতে কেনা হচ্ছে। শিগগিরই আরও তিনটি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।
বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়, যা দেশের শিপ বিল্ডিং ও মেরিটাইম ট্রেড খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
এছাড়া চীনের ইয়েনতাই বন্দরের সঙ্গে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের যৌথ সহযোগিতায় পোর্ট ফ্যাসিলিটি উন্নয়নের বিষয়েও বৈঠকে সম্মতি প্রকাশ করা হয়।
নদীগুলোর উচ্চ সিলটেশন রেট (পলি জমার হার) উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, নদী শাসনের মাধ্যমে সিল্টেশন হ্রাসে চীনের প্রযুক্তি ও জ্ঞান সহায়তা বাংলাদেশকে উপকৃত করতে পারে। চীনের পরিবহন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেয়।
পোর্ট পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় চীনের দক্ষতা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বন্দরগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষভাবে, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে চীন সরকারের অর্থায়নের জন্য এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে দ্রুত ঋণচুক্তি সম্পাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। চীনও মোংলা বন্দরকে একটি আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।
বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে মেরিটাইম খাত ও জ্ঞান আদান-প্রদানের বিষয়েও আলোচনা হয়। উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, চীনের গুয়াংজু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশি সি-ফেয়ারদের প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান বিনিময়ে ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতে এ সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে।
বাংলাদেশ ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর আওতায় চীনের সঙ্গে অবকাঠামো ও সংযোগ উন্নয়নে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
এছাড়া, ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (IMO) কাউন্সিল নির্বাচনে ক্যাটাগরি ‘সি’-এর সদস্যপদে বাংলাদেশের প্রার্থিতার বিষয়টি তুলে ধরে উপদেষ্টা চীনসহ অন্যান্য দেশের সমর্থন কামনা করেন। চীনের ভাইস মিনিস্টার বাংলাদেশের প্রার্থিতায় সমর্থনের আশ্বাস দেন এবং নিজ দেশের প্রার্থিতার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
এই বৈঠককে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে মেরিটাইম খাতে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।