ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে স্থায়ী শান্তির পথ খুঁজতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নেতাদের এক টেবিলে বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি বৈঠক আয়োজনে তিনি কাজ শুরু করেছেন। এ বৈঠকের পর তিন পক্ষ নিয়ে একটি আলোচনা হবে, যেখানে তিনিও উপস্থিত থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “পুতিন ও জেলেনস্কিকে এক টেবিলে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। এরপর আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসব।” যদিও বৈঠকটি কবে এবং কোথায় হবে—সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টেও তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেখানে ট্রাম্প লেখেন, “রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। আলোচনার ভিত্তিতে প্রথমে পুতিন ও জেলেনস্কি বৈঠকে বসবেন, এরপর আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেব।”
তিনি আরও জানান, হোয়াইট হাউসে আয়োজিত বৈঠকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এই নিশ্চয়তা দেবে, আর পুরো প্রক্রিয়ার সমন্বয় করবে যুক্তরাষ্ট্র।
বৈঠকের মাঝপথে ট্রাম্প পুতিনকে ফোন করেন বলেও নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন কূটনীতিক জানিয়েছেন, এই ফোনালাপ প্রায় ৪০ মিনিট স্থায়ী ছিল। পরে আলোচনায় ফেরেন ট্রাম্প।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমি এর আগেও ছয়টি যুদ্ধ থামিয়েছি। তবে এটিই সবচেয়ে জটিল। তবুও আমি বিশ্বাস করি, আমরা সমাধানে পৌঁছাতে পারব।”
তিনি বলেন, “মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে, সেটি থামাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, জেলেনস্কি যেমন এই যুদ্ধ থামাতে চান, পুতিনও তেমন আগ্রহী। গোটা বিশ্ব ক্লান্ত হয়ে গেছে। আমরা যুদ্ধবিরতি চাই না, চাই স্থায়ী শান্তিচুক্তি—যাতে আর রক্তপাত না ঘটে।”
ট্রাম্প আশ্বস্ত করে বলেন, “আমরা ইউক্রেনকে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেব।”
এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, “যুদ্ধ থামাতে ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে দেখছি।”
উল্লেখ্য, এর আগে শুক্রবার আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন ট্রাম্প। এর তিন দিনের মাথায় সোমবার হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতাদের নিয়ে আরেকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন তিনি। এতে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে।
ট্রাম্প শেষ করেন এই বলে, “আমি আশা করি, আমরা শিগগিরই একটি বাস্তবসম্মত শান্তির পথে এগোতে পারব।”