November 23, 2025, 8:39 pm

২৬০ ওষুধের দাম বেঁধে দিচ্ছে সরকার

  • Update Time : Monday, August 18, 2025
  • 65 Time View

সরকার অত্যাবশ্যকীয় ২৬০টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে যাচ্ছে, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধগুলো আরও সাশ্রয়ী দামে রোগীদের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ লক্ষ্যে ১৮ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল।

বৈঠকে ওষুধের তালিকা হালনাগাদ, উৎপাদন খরচ এবং প্রস্তুতকারীদের জন্য ন্যায্য মুনাফা নিশ্চিত করে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ২৮৬টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা তৈরি হলেও মাত্র ১১৭টির মূল্য সরকার নির্ধারণ করতে পেরেছিল। বাকি ওষুধগুলোর দাম নির্ধারণ করতেন প্রস্তুতকারকরা, ফলে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হতো।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইকিউভিআইএর তথ্যমতে, বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয়ের ৪৪ শতাংশই ব্যয় হয় ওষুধে, যেখানে বৈশ্বিক গড় মাত্র ১৫ শতাংশ। ২০২২ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী, ওষুধের উচ্চমূল্যের কারণে প্রায় ৬১ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে।

টাস্কফোর্সে ওষুধ প্রস্তুতকারীদের কোনো প্রতিনিধি না রাখায় বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি উদ্বেগ জানিয়েছে। সংগঠনের মহাসচিব ও ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, “মূল্য নির্ধারণের নীতিমালায় প্রস্তুতকারীদের অন্তর্ভুক্ত না করলে রোগী, চিকিৎসক ও শিল্প—তিন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

তাঁর মতে, কেবল কাঁচামাল নয়, গবেষণা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিকায়নের খরচও দামের অংশ হওয়া উচিত।

এই উদ্যোগে সরকারকে সহায়তা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ইউনিসেফ। আগামী ২২ আগস্ট WHO’র প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে পরামর্শ দেবে।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন, এবার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নজরদারি আরও জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, “পূর্বের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, সরকার এবার একা কাজ করছে না। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় কার্যকর মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হবে দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া।”

গত ২৪ জুলাই গঠিত টাস্কফোর্সের প্রধান হিসেবে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। কমিটিকে ২০ আগস্টের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

টাস্কফোর্সের এক সদস্য বলেন, “বর্তমানে ওষুধ প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও স্পষ্ট নীতিমালার ঘাটতির কারণে ওষুধের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নেয় অনেক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “শিল্প উদ্যোক্তাদের বাদ দিয়ে কোনো নীতিমালা তৈরি করা ঠিক নয়। সামনে এলডিসি উত্তরণ, এ বাস্তবতায় শিল্পকে বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা ঝুঁকি তৈরি করবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, “সব অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করা গেলে জনগণের চিকিৎসা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। তবে তা বাস্তবায়নে ওষুধ প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং উপযুক্ত আইনি কাঠামোর প্রয়োজন হবে।”

সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “মূল্য নিয়ন্ত্রণে শুধু নির্ধারণ নয়, কার্যকর বাস্তবায়নই আসল চ্যালেঞ্জ। তাই ওষুধ শিল্পের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি দরকার, যাতে প্রস্তুতকারকরা নৈতিকভাবে লাভ করেও জনগণকে সেবা দিতে পারে।”

Spread the love
More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved
Theme Developed BY ThemesBazar.Com