আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলে এক বা একাধিক আসনের ফলাফল বাতিল করতে পারবে, এমনকি প্রয়োজন মনে করলে পুরো নির্বাচনও বাতিল করতে সক্ষম হবে। এছাড়া এবার নির্বাচনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ‘না’ ভোটের বিধানও।
সোমবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এসব তথ্য জানান। এর আগে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ইসির এক বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী চূড়ান্ত করা হয়।
সানাউল্লাহ জানান, নির্বাচন চলাকালে ইসি এখন যে কোনো আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে পারবে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় পুরো নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের ক্ষমতাও প্রয়োগ করতে পারবে। আগে যেসব আইনি অস্পষ্টতা ছিল, তা এবার আরপিওতে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার বিধানও সংযোজন করা হয়েছে।
নতুন বিধানে, ‘না’ ভোট ফের চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ, কোনো আসনে যদি মাত্র একজন প্রার্থী থাকেন, তবে তাকে সরাসরি বিজয়ী ঘোষণা করা হবে না—তাকে অবশ্যই ভোটে অংশ নিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে দ্বিতীয় দফার ভোটেও জিততে হবে।
ভোট গণনায় যদি দুজন প্রার্থীর ভোট সমান হয়, তাহলে আগের মতো লটারির মাধ্যমে নয়, নতুন করে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হবে।
ভোট গণনার সময় সংবাদকর্মীরা পুরো সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন, তবে মাঝপথে গণনা কক্ষে প্রবেশ-প্রস্থান সীমিত করা হবে। নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে অনুমোদিত পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথাও জানানো হয়।
এবার থেকে জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রতিটি দল তাদের নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচন করবে। দলীয় স্বাধীনতা বজায় রাখতে এই বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
প্রার্থীদের ব্যয়ের ক্ষেত্রে অডিট ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে ও প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক দলগুলো সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান নিতে পারবে। তবে সব লেনদেন অবশ্যই ব্যাংকিং চ্যানেলে হতে হবে এবং কর রিটার্নে তা উল্লেখ করতে হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, অপপ্রচার চালানো কিংবা মানহানিকর তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। প্রার্থী, দল, সংস্থা কিংবা গণমাধ্যম—সবার ক্ষেত্রেই এ বিধান কার্যকর হবে।
কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ হলে তার নিবন্ধন স্থগিত রাখার বিষয়টি আগের নিয়মে স্পষ্ট ছিল না। এবার আরপিওতে তা সুনির্দিষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সানাউল্লাহ জানান, সংশোধনীগুলো এখন প্রায় চূড়ান্ত এবং আশা করা হচ্ছে, এই সপ্তাহের মধ্যেই খসড়া সম্পন্ন করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যাবে।