গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান।
শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে জিএমপির সদর দপ্তর, ওয়্যারলেস গেট এলাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
কমিশনার বলেন, “সাংবাদিক হত্যার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। ঘটনাটি প্রতিরোধ করতে পারিনি—এটি আমাদের ব্যর্থতা। তবে আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করতে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি অপরাধ প্রতিরোধ করা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। জনসম্পৃক্ততা ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। আমরা দুঃখিত যে, এই ঘটনায় আমরা তাকে রক্ষা করতে পারিনি।”
ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে তিনি জানান:
ঘটনার দিন, প্রথমে ভিকটিম বাদশা মিয়া স্থানীয় একটি এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। বিষয়টি নজরে আসে পারুল আক্তার ওরফে গোলাপীর। তিনি বাদশাকে হানি ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে বাদশা বিষয়টি বুঝতে পেরে গোলাপীকে ঘুষি মারেন—যা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে।
এরপর গোলাপীর সহযোগীরা আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা অবস্থায় সামনে এসে বাদশাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। বাদশা পালানোর সময় সাংবাদিক তুহিন ঘটনাটির ভিডিও করছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে হামলাকারীরা তুহিনকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে তিনি একটি চা দোকানে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ধরে এনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জিএমপি কমিশনার বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং সংঘবদ্ধ। সাংবাদিক তুহিন সংগঠিত অপরাধ চক্রের কর্মকাণ্ড ভিডিও করছিলেন বলেই তাকে টার্গেট করা হয়। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকি একজনও শিগগিরই ধরা পড়বে।”
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৫) — জামালপুর, তার স্ত্রী পারুল আক্তার ওরফে গোলাপী (২৫), মো. স্বাধীন (২৮) — পাবনা, আল আমিন (২১) — খুলনা, শাহজালাল (৩২) — কুমিল্লা, মো. ফয়সাল হাসান (২৩) — পাবনা, সুমন নামের একজন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “সাংবাদিক তুহিন তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় প্রাণ দিয়েছেন। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য রয়েছে। এভিডেন্সই তাদের অপরাধ প্রমাণ করবে। আমরা সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সাজার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারলেই অপরাধ দমন সম্ভব।”