জুলাই ঘোষণাপত্রকে ‘অসম্পূর্ণ’ আখ্যায়িত করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, নির্বাচন আয়োজনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার, বিচার এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে সরকারকে। একইসঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে ব্যর্থতার অভিযোগও তুলেছে দলটি।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রে শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে স্বীকৃতি, আন্দোলনকারী ও শহীদ পরিবারদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এবং বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার করা হলেও, এটি এখনো পরিপূর্ণ নয়।”
আখতার হোসেন অভিযোগ করেন, “ঘোষণাপত্রে শহীদের সংখ্যা ‘প্রায় এক হাজার’ বলা হলেও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এক হাজার ৪০০ শহীদের কথা বলা হয়েছে। সরকার গত এক বছরে শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে।”
এনসিপি মনে করে, ১৯৪৭-এর আন্দোলন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের ঘটনা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড এবং মোদিবিরোধী আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর উল্লেখ না থাকায় ঘোষণাপত্র আরও দুর্বল হয়েছে।
ঘোষণাপত্রের ২৫ ও ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদের প্রতি ইঙ্গিত করে আখতার হোসেন বলেন, “এখানে বলা হয়েছে, নির্বাচন-পরবর্তী সরকার সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে ঘোষণাপত্রকে তফসিলে যুক্ত করবে। কিন্তু এনসিপি দীর্ঘদিন ধরে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে আসছে। ঘোষণাপত্রে সেই দাবির প্রতিফলন নেই, বরং তা পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনে বিভিন্ন সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলেও বাস্তবায়নের রূপরেখা এখনো পরিষ্কার নয়। শুধুমাত্র ভবিষ্যতের সরকারের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে না দিয়ে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন শুরু করা উচিত।”
নির্বাচনের আগে সংস্কার দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, “আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণার বিরোধিতা করছি না। তবে তার আগে সরকারের কিছু অপরিহার্য দায়িত্ব রয়েছে—গণহত্যাকারীদের বিচার, কাঠামোগত সংস্কার এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। এগুলো না হলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়টি সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন সরকারের কাছে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি চান—নির্বাচনের পূর্বেই সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে, বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে হবে এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থনে অংশ নেওয়া জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”