গাজা উপত্যকায় অপুষ্টির হার আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। সংস্থাটির মতে, খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রবাহে ইচ্ছাকৃত বাধা সৃষ্টি এই মানবিক বিপর্যয়ের প্রধান কারণ।
রোববার ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গাজায় অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর হার জুলাই মাসে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।’ চলতি ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৭৪ জন অপুষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে শুধু জুলাই মাসেই মারা গেছেন ৬৩ জন।
মৃতদের মধ্যে ২৪ জন শিশু (যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম), একজন শিশু (পাঁচ বছরের বেশি বয়সী), এবং ৩৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক রয়েছেন।
WHO আরও জানায়, ‘এইসব মানুষ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পৌঁছানোর পরপরই বা পৌঁছেই মারা গেছেন। তাদের শরীরে অপুষ্টির প্রকট চিহ্ন ছিল।’
সংস্থাটি মন্তব্য করে, ‘এই সংকট চাইলেই এড়ানো যেত। খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণ প্রবেশে বাধা ও দেরি বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
শিশুরাই সবচেয়ে ঝুঁকিতে:
পুষ্টি অংশীদারদের তথ্য অনুযায়ী, গাজা সিটিতে প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন এখন অপুষ্টিতে ভুগছে। ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত জটিল রোগের হার জুনের পর থেকে তিন গুণ বেড়েছে।
শুধু গাজা শহর নয়, খান ইউনিস ও গাজার কেন্দ্রীয় অঞ্চলেও অপুষ্টির হার মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে।
WHO আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ‘নিরাপত্তা ও চলাচলসংক্রান্ত বাধার কারণে অনেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছাতে পারছেন না, ফলে প্রকৃত সংখ্যাটি প্রকাশিত সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে।’
ইসরায়েল আজ রোববার থেকে গাজার কয়েকটি অঞ্চলে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার কৌশলগত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে, যাতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হয়। তবে WHO বলছে, এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়।
সংস্থাটির মতে, গাজায় অনাহার ও অপুষ্টি দূর করতে হলে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন। শিশু ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য নিরবচ্ছিন্ন খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ত্রাণ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রবাহ যেন নিয়মিত, বাধাহীন ও অব্যাহত থাকে—এটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
মৃত্যু বাড়ছেই
গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টিতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টি ও অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৩ জন, যাদের মধ্যে ৮৭ জনই শিশু।
এই ভয়াবহ মানবিক সংকটের প্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দ্রুত ও কার্যকর সহায়তা পৌঁছানো এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।