মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (২৬ জুলাই) রাত ৯টা ১০ মিনিটে ইনস্টিটিউটে পৌঁছে তিনি পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের কাছ থেকে দুর্ঘটনার বিবরণ ও আহতদের বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত জানতে চান।
অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন জানান, মাল্টিডিসিপ্লিনারি কনসালটেশন বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুসরণ করে রোগীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং চিকিৎসার গুণগতমান নিশ্চিত করতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও পরামর্শ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা সংকটজনক (ক্রিটিক্যাল), ৯ জন গুরুতর (সিভিয়ার) এবং ২৩ জন মাঝারি (ইন্টারমিডিয়েট) পর্যায়ের বলে জানান তিনি। রোগীদের অবস্থার ভিত্তিতে এই শ্রেণিবিন্যাস পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানান পরিচালক।
প্রধান উপদেষ্টা জানতে চান, চিকিৎসার জন্য কোনো যন্ত্রপাতি, ওষুধ বা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে কি না। জবাবে পরিচালক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে এবং কিছু বিশেষ সরঞ্জাম বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সঙ্গে করে এনেছেন।
হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টাকে বিস্তারিত তথ্য দেন ইনস্টিটিউটের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান। তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর আহতদের প্রথমে নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত বার্ন ইনস্টিটিউট ও সিএমএইচে পাঠানো হয়।
ঘটনার পরপরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বার্ন ইনস্টিটিউট প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। চিকিৎসক, নার্সসহ সেবাদানকারী সবাই একসঙ্গে কাজ করে প্রায় ৩০ জন দগ্ধ রোগীকে তাৎক্ষণিক সেবা দিতে সক্ষম হন।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য রোগীদের একাধিক হাসপাতালে নেওয়ায় কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। নিহতদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ প্রোফাইলিং করতে হওয়ায় সময় লেগেছে।
অধ্যাপক সায়েদুর আরও উল্লেখ করেন, রোগীদের দ্রুত স্থানান্তরের সময় অ্যাম্বুলেন্সের সংকট স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছে। এ ঘটনাটি দেশের জরুরি স্বাস্থ্যসেবার দুর্বলতাগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা জরুরি স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো উন্নয়নে দ্রুত করণীয় নির্ধারণের নির্দেশ দেন এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে বলেন।
তিনি নিহতদের পরিবার, আহত ও তাদের স্বজনদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও ট্রমা কাউন্সেলিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এজন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং মাইলস্টোন স্কুলের সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
রোগীদের স্বজনদের যত্ন ও সহানুভূতির সঙ্গে দেখভালের বিষয়েও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তরিক এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
চিকিৎসক, নার্স ও সেবাদানকারী সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। একইসঙ্গে, এই দুঃসময়ে যারা বিদেশ থেকে সহায়তা দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম।