সীমান্ত বিরোধের জেরে নতুন করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হয়। সংঘাতে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্যাংকক সরকার। কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে থাইল্যান্ডের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে বোমাবর্ষণ করার তথ্যও নিশ্চিত হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ‘এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল’ নামের একটি সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এই অঞ্চলে ১১ শতকের পুরোনো একটি মন্দির ঘিরে ২০০৮ সালে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ তীব্র হয়, যা সময়ের সঙ্গে রূপ নেয় সামরিক উত্তেজনায়।
আজ গোলাগুলির শুরু হয় সীমান্তে অবস্থিত ‘তা মোয়ান থম’ মন্দিরের কাছে। সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে দুই দেশ। থাইল্যান্ডের দাবি, কম্বোডিয়ার সেনারা সীমান্তে ড্রোন মোতায়েন করে নজরদারি চালাচ্ছিল, যার জেরে উত্তেজনা তৈরি হয়। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া বলছে, থাইল্যান্ড তাদের সঙ্গে করা সীমান্তচুক্তি ভেঙে সেনা পাঠিয়েছে মন্দিরের দিকে।
থাই সরকারের তথ্যমতে, সংঘাতে দেশটির সুরিন, উবন রাতচাথানি এবং শ্রিসাকেত প্রদেশে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সমসাক থেপসুথিন জানান, নিহতদের মধ্যে ১১ জনই বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। বাকি একজন সেনাসদস্য। কম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণে আরও ৩১ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন বেসামরিক এবং ৭ জন সেনা।
কম্বোডিয়ার সরকার এখনো পর্যন্ত হতাহতের কোনো সংখ্যা প্রকাশ না করলেও দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান তাদের ভূখণ্ডের একটি সড়কে দুটি বোমা ফেলে। এ হামলার কথা স্বীকার করেছেন থাই সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা, রিচা সুকসুওয়ানন, যিনি জানান, এ হামলা কম্বোডিয়ার একটি সামরিক স্থাপনায় চালানো হয়েছে।
উভয় দেশ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে থাইল্যান্ড। অন্যদিকে, কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়িয়ে দিয়েছে কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘অত্যধিক শক্তি প্রয়োগের’ অভিযোগ এনেছে তারা।
সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত মে মাসে, যখন সংঘাতে কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হন। এরপর থেকেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ায় দুই দেশ। গত সপ্তাহে একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণে থাইল্যান্ডের এক সেনা আহত হন। উত্তেজনা আরও বাড়ে যখন থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় এবং বহিষ্কারের হুমকি দেয়।
সংঘাতের পর থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন মেনে শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় তার দেশ। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতও শান্তির পক্ষে অবস্থান নিলেও বলেন, ‘সামরিক আগ্রাসনের জবাব সামরিকভাবেই দিতে হবে।’
এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের বর্তমান সভাপতি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই অঞ্চল যেন আর একটি যুদ্ধের মাঠ না হয়।”