সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সওয়েইদা প্রদেশে সুন্নি বেদুঈন ও দ্রুজ গোষ্ঠীর মধ্যে টানা চারদিন ধরে চলা ভয়াবহ সংঘাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৮ জনে।
বুধবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি, স্থানীয় পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ও বিভিন্ন সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯২ জন দ্রুজ গোষ্ঠীর সদস্য, ২৮ জন বেসামরিক নাগরিক, ১৩৮ জন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ১৮ জন বেদুঈন যোদ্ধা রয়েছে।
যদিও গতকাল সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংঘাত বন্ধের ঘোষণা দেয়, বাস্তবে সংঘর্ষ থামেনি। দ্রুজ ও বেদুঈন যোদ্ধাদের মধ্যে খণ্ড খণ্ড লড়াই এখনও চলছে।
সংঘাতের সূচনা হয় রোববার, যখন দামেস্কগামী মহাসড়কে এক দ্রুজ সবজি বিক্রেতাকে অপহরণ করে বেদুঈন গোষ্ঠীর সশস্ত্র সদস্যরা। প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা অপহরণ শুরু হলে দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতায়।
সোমবার পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি বাহিনী সওয়েইদায় হস্তক্ষেপের ঘোষণা দেয়। কিন্তু দ্রুজ গোষ্ঠী ও পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের অভিযোগ, সরকার বাহিনী সংঘাত নিরসনের পরিবর্তে পক্ষপাতমূলকভাবে বেদুঈনদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
দ্রুজ গোষ্ঠীর দাবি, সংঘাতে তাদের বসতি, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়েছে এবং সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত আছে।
আজও সওয়েইদা শহরে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম “সওয়েইদা টুয়েন্টিফোর” জানিয়েছে, বুধবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভারী কামান ও মর্টার শেলের গোলাবর্ষণ হয়েছে।
এএফপির এক প্রতিবেদক শহরে পরিদর্শনের সময় অন্তত ৩০টি মরদেহ দেখতে পান, যাদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র যোদ্ধার মরদেহও ছিল।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারি বাহিনীর ওপর বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীগুলো হামলা চালালে তারা পাল্টা অভিযান শুরু করে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। এই সংঘর্ষ চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে সওয়েইদায় শতাধিক প্রাণহানির ঘটনার পর সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েল আগেই সিরিয়ার দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর অংশ হিসেবে সওয়েইদায় কয়েকটি ট্যাংকের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে হামলায় ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
বুধবার ফের এক বিবৃতিতে ইসরায়েল সিরিয়ার শাসকগোষ্ঠীকে সতর্ক করে বলেছে, যদি তারা ইসরায়েলের বার্তা গুরুত্ব না দেয়, তাহলে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের এই হুঁশিয়ারি ও সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ সহিংসতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।