জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘জুলাই পদযাত্রা’ ঘিরে বুধবার গোপালগঞ্জে সংঘটিত দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণে গোটা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সরকারি বাহিনী ও হামলাকারীদের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়।
১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী মাসব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনসিপি ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ আয়োজন করে। সকাল ৯টার পর থেকে বিকেল পর্যন্ত অন্তত চার দফা হামলা চালান নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
সদর উপজেলার কংশুরে পুলিশ ও ইউএনও’র গাড়িতে হামলা, পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, জেলা কারাগার চত্বরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
হামলাকারীরা গাড়ি ও সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলকারীদের ওপর আক্রমণ চালায়।
বেলা ২টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা—আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
তাদের আগমনের আগেই সমাবেশস্থলে মঞ্চ ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটে। সমাবেশ শেষে বিকেল ৩টার দিকে গাড়িবহর নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় নেতারা ফের হামলার মুখে পড়েন এবং একপর্যায়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন।
এনসিপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন মসজিদে জোর করে ঢুকে মাইক ব্যবহার করে হামলার উসকানি দিয়েছেন। প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ বলে তারা মন্তব্য করেন।
গোপালগঞ্জের ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকার শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। ঢাকার বাইরে অন্তত ২০টি স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে।
হামলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। চার প্লাটুন বিজিবি দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।
গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এবং বিকেল ৫টার দিকে এনসিপির নেতারা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে শহর ত্যাগ করেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর একটি APC-তে উঠে যাচ্ছেন।
রাত ৯টা ৩০ মিনিটে খুলনায় এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দমন করতে আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও তাদের সহযোগী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে জঙ্গি কায়দায় আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।”
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে এনসিপি।
সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “এই ঘৃণ্য হামলার দায় কেউ এড়াতে পারবে না। দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাতেই পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কায় গোপালগঞ্জে অতিরিক্ত দেড় হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে হামলার পর সড়কে গাছ ফেলে ও অন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে পুলিশের ঢোকা বিলম্বিত হয়।